ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগীর জন্য সরকারের গড়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। চলতি মৌসুমে সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যয় করেছে বলেও জানান তিনি। রোববার বিকেলে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আর বাকি ৩০ শতাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে। সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অনেকের প্লাটিলেট ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। আবার অনেকে শুধু ওষুধেই সুস্থ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন, তাদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪১১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৫৩৭ জনের। এছাড়া এখনো হাসপাতালে ভর্তি ৮ হাজার ২৩৬ জন।

নারীদের ঝুঁকি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর নারীরা আক্রান্ত কম হলেও মারা যাচ্ছেন বেশি। পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ নারী মারা গেছেন। তারা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করছেন বলেই তাদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। দেশের মোট হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ রোগী ৬৫ শতাংশ। ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোগীর ৬৫ শতাংশ নারী আর ৩৫ শতাংশ পুরুষ।

জাহিদ মালেক বলেন, মশানিধন জোরদার করার পাশাপাশি ডেঙ্গু মোকাবেলায় জনসচেতনতা ভীষণ জরুরি। ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু, ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে। এই অবস্থায় পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মোচ রোগীর অর্ধে ঢাকায়। বাকি অর্ধেক ঢাকার বাইরে। ঢাকায় রোগী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অর্ধেক রোগ কমাতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্টের জন্য সারা বছর কাজ করতে হবে। একটি আন্ত:মন্ত্রনালয় কমিটি করা হবে। যারা বছর জুড়ে ডেঙ্গু মোকাবেলার কৌশল নিয়ে কাজ করবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা বলেন, ডেঙ্গু এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে। তবে, মহামারীকালে সেই ভ্যাকসিন খুব একটা কাজে দেবে না।

এসময় ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ২২ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার সমমূল্যের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দেয়ার কথা জানায় ইউনিসেফ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, সিটি করপোরেশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *